Header Ads

হিন্দুধর্ম ও বিজ্ঞান

হিন্দুধর্ম ও বিজ্ঞান

    বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান ও ধর্ম নিয়ে কিছু বলা একান্ত দরকার। হিন্দুরা সাধারণত বিজ্ঞানমনষ্ক হয়ে থাকে। তবে এটা দুঃখজনক যে প্রগতিশীল অনেক হিন্দুরা মনে করেন ধর্ম শুধু জুজু বুড়ির ভয় আর অন্ধবিশ্বাস ছাড়া কিছু নয়। কেউ কেউ দুপাতা বিজ্ঞানের বই পড়েই নিজেকে নাস্কিক বলে পরিচয় দিয়ে গর্ব বোধ করেন। এদেরকে কুপমণ্ডুপ বা গণ্ড মুর্খ ছাড়া আর কি বলা যায়। আমি জোড় গলায় বলতে চাই "ধর্ম ও বিজ্ঞান সাংঘর্ষিক বা পরস্পর বিরোধী নয়"। একজন ধার্মিকের বিজ্ঞানী হওয়া বা একজন বিজ্ঞানীর ধার্মিক হওয়াটা কোনমতেই আশ্চর্যজনক নয়। বিজ্ঞান মানে বিশেষ জ্ঞান আর ধর্ম হল ধারণ করা। ধর্মের মধ্যে যেমন বিশেষ জ্ঞান আছে তেমনি বিজ্ঞানের মধ্যেও ধর্ম আছে অর্থাৎ বিজ্ঞান বিভিন্ন বস্তুর ধর্ম নিয়ে আলোচনা করে। দেহ ও মন দুইটি বস্তু যারা একে অন্যের পরিপূরক। বিজ্ঞান মূলত দেহের কল্যাণ এবং ধর্ম মূলত মনের কল্যাণ সাধনে চেষ্টা করে। ধর্ম কখনও এটা বলে না যে তুমি দেহের কল্যাণ কর না। তবে এটা বলে যে মন দেহ থেকে শ্রেষ্ঠ এবং মন দেহের চালক। মন যে দেহের চালক এটা আধুনিক বিজ্ঞানও অস্বীকার করতে পারবে না সুতরাং ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে কোন বিরোধ নেই এবং উভয়ের লক্ষ্য মানব কল্যাণ। 

হিন্দুধর্ম ও বিজ্ঞান
    

হিন্দুধর্ম ও বিজ্ঞান (পর্ব-১)

    ধর্ম ও বিজ্ঞানের প্রথম পর্বে আমি বলেছিলাম ধর্ম ও বিজ্ঞান পরস্পর সাংঘর্ষিক বা স্ববিরোধী নয়। তাই বিজ্ঞানমনষ্ক হয়ে ধর্মকে এবং ধার্মিক হয়ে বিজ্ঞানকে অবজ্ঞা করার আবশ্যকতা নেই। ধর্ম মানসিক বিষয়কে এবং বিজ্ঞান দৈহিক বিষয়কে প্রাধান্য দেয়, তবে মন অবশ্যই দেহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। ধর্ম ও বিজ্ঞানের উভয়ের লক্ষ্য মানব কল্যাণ। এই ধর্ম ও বিজ্ঞানকে কেন্দ্র করে আধুনিক পাশ্চত্য (ইউরোপ ও আমেরিকান) দর্শন এবং ভারতীয় দর্শনের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এক কথায় আধুনিক পাশ্চত্য দর্শন ভোগবাদে এবং ভারতীয় দর্শন ত্যাগবাদ বা আধ্যাত্মবাদে বিশ্বাসী। তবে প্রাচীন পাশ্চত্য দর্শন এবং প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের খুব একটা পার্থক্য চোখে পড়ে না। কারণ প্রাচীন পাশ্চত্য দর্শন বলতে মূলত গ্রীক দর্শনকে বোঝায় এবং এই গ্রীক দর্শনের সূচনা করেছিলেন আর্যদের বংশধরগণ। এরিস্টটল, প্লেটো, সক্রেটিসের পূর্বে পারমেনাইডিস আদি আর্য-বংশোদ্ভুত দার্শনিকগণের হাতেই গ্রীক-দর্শনের গোড়াপত্তন হয়েছিল। প্রাক্-সক্রেটিস যুগের দার্শনিক গণ চারটি মৌলিক উপাদানের কথা বলেছিলেন, যথা- মাটি, জল, আগুন ও বায়ু। ভারতীর দর্শনিকগণ আরেকটি অতিরিক্ত উপাদানের কথা বলেছেন এবং ঐ পঞ্চম উপাদানের নাম ব্যোম বা আকাশ (কেউ কেউ ইথার বলে)। বর্তমান বিজ্ঞানীরা ১০৯টি মৌলের কথা বললেও ঐ সব কয়টি মৌল এই পাঁচটির মধ্যে রয়েছে। গ্রীক-দর্শন বলেছিল- “know thyself” অর্থাৎ নিজেকে জানো এবং ভারতীয় দার্শনিকগণও একই সত্য উপলব্ধি করে বলেছিলেন-“আত্মানাং বিদ্ধি” অর্থাৎ নিজেকে জানো। “পিতৃ > পিটার > ফাদার, মাতৃ > মাটার > মাদার” এরকম অনেক শব্দের উৎস খুজলে পাশ্চত্য ও আর্য ভাষা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। আর্যগণের এক অংশ মধ্য ইউরোপ থেকে ভারতে চলে আসে এবং আরেক অংশ গ্রীস, ইতালীসহ ইউরোপের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতে আসা আর্য ও অনার্যদের সংকর হলো আজকের এই হিন্দু। যা হোক, আধুনিক পাশ্চত্য দার্শনিকগণ তাদের প্রাচীণ দর্শন থেকে সরে আসলেও আজও ভারতীয় দর্শনের খুব একটি পরির্তন হয় নি। হিন্দুগণ আজও সেই আর্য ঋষিদের দর্শনকে ধরে আছে এবং তারা যে ভুল করেন নি তা ক্রমশ বলব। এই পোস্টটি লিখেছি সেই সব তরুনদের উদ্দেশ্যে যারা ক্রমশ ভারতীয় দর্শন থেকে সরে গিয়ে পাশ্চত্য দর্শনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আজ এই পর্যন্ত। ধর্ম ও বিজ্ঞানের দ্বিতীয় পর্বে পাশ্চত্য ও ভারতীয় দর্শনের তুলনামূলক আলোচনা করব।

হিন্দুধর্ম ও বিজ্ঞান (পর্ব-২)

    ধর্ম ও বিজ্ঞানের প্রথম পর্বে আমি বলেছিলাম ধর্ম ও বিজ্ঞান পরস্পর-বিরোধী নয়। দ্বিতীয় পর্বে বলেছিলাম আধুনিক পাশ্চত্য-দর্শন বিজ্ঞানকে এবং ভারতীয়-দর্শন ধর্মকে প্রাধান্য দেয় অর্থাৎ আধুনিক পাশ্চত্য দর্শন ভোগবাদে এবং ভারতীয় দর্শন ত্যাগবাদ বা আধ্যাত্মবাদে বিশ্বাসী। এখন পাশ্চত্য-দর্শন ও ভারতীয়-দর্শনের তুলনামূলক আলোচনা করব। পাশ্চত্য-দর্শন বলে দেহ শ্রেষ্ঠ আর ভারতীয়-দর্শন বলে মন বা আত্মা শ্রেষ্ঠ। ভারতীয়-দর্শন বলে মন দেহ থেকে শ্রেষ্ঠ। ত্যাগ ও অভ্যাস দ্বারা ইন্দ্রিয়গুলোকে (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক) সংযম করে মনকে সুখী করতে পারলে দেহ ভাল থাকবে। মনই দেহের চালক অর্থাৎ দেহ মন থেকে বড় নয়। কিন্তু পাশ্চত্য-দর্শন বলে দেহকে সুখী করতে হবে। দেহ সুখী হলে অর্থাৎ দেহ ভোগ করতে পারলে মন এমনিতেই সুখী হবে। অর্থাৎ পাশ্চত্যবাসীর কাছে দেহের মূল্যই বেশী। তাই তারা দেহকে সুখী করার জন্য বিজ্ঞানকে আশ্রয় করে কত কিছু আবিষ্কার করেছেন। যেমন- বৈদ্যতিক পাখা বা শীততাপ যন্ত্রের কথাই ধরি। পাশ্চত্য বিজ্ঞানীরা বৈদ্যতিক পাখা বা শীততাপ যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন শীত-গ্রীষ্ম জয় করে দেহকে শান্তি দেয়ার জন্য। ভারতীয় দর্শনও বলে “শীতে-গ্রীষ্মে সমদর্শী হও কিন্তু ভারতীয় ঋষিগণ দেহকে শীতল বা উত্তাপ রাখার কোন যন্ত্র আবিষ্কার করেননি। তবে উপায় কী? এখানে ভারতীয় দর্শন কী ব্যর্থ? না কখনো না, সনাতন ঋষিরা সেই প্রাগ-ঐতিহাসিক যুগে শীত-গ্রীষ্ম জয় করার যে উপায় বা পন্থা বলে গেছেন তা ঐ মামুলী বিজ্ঞানীর চিন্তার অতীত। আমাদের শীত-গ্রীষ্ম অনুভূত হয় মূলত স্পর্শ-ইন্দ্রিয় বা ত্বকের মাধ্যমে। তাই ঋষিগণ বলেছেন তোমরা স্পর্শ-ইন্দ্রিয়কে জয় কর তবে শীত-গ্রীষ্মকে জয় করতে পারবে। এ সাধনা-পদ্ধতি তাঁরা শিষ্যদের শিখিয়ে গেছেন। আমরা তা ধরে রাখতে পারি নি সেটা আমাদের ব্যর্থতা, ভারতীয় দর্শনের নয়। ভেবে দেখুন ভারতী দর্শন শীত-গ্রীষ্মকে জয় করার যে পন্থা বলে গেছেন তাতে কোন পয়সা লাগে না কিন্তু অভ্যাস লাগে আরা পাশ্চত্য দর্শন অনুসরণ করে শীত-গ্রীষ্ম জয় করতে গেলে বিদ্যুৎ লাগে, ফ্যান এসি ক্রয় করা লাগে। এবার ভেবে দেখুন কোনটা শ্রেষ্ঠ? শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সহাবে তাহা সয়। আমার নিজের কথাই বলি, আমি বাল্যে অর্থাৎ ষোল বৎসর বয়স পর্যন্ত গরমে ফ্যান ছাড়া ঘুমিয়েছি আর আজ ফ্যান ছাড়া ঘুমাতে পারি না। অর্থাৎ পাশ্চত্য দর্শন আমার শরীরকে অচল ও যন্ত্র-নির্ভর করেছে এবং দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দিয়েছে। অথচ পাশ্চত্য দর্শনের ফাঁদে পা না দিয়ে ষোল বৎসরের ঐ অভ্যাস চালিয়ে গেলে আজো ফ্যান, এসি ছাড়া গরমে ঘুমাতে পারতাম এবং তাতে পয়সা খরচও হত না। কেউ হয়তো বলতে পারেন ভারতীয় দর্শন কোন যন্ত্র আবিষ্কার ছাড়া যে শীত-গ্রীষ্ম জয় করার পন্থা আবিষ্কার করেছেন তার প্রমাণ কী? উত্তর সহজ, শীত-গ্রীষ্ম জয় না করতে পারলে এখনো হিমালয়ে তুষার আবৃত স্থানে সন্ন্যাসীরা কী করে সাধনা করছেন। আগে নাকি ঋষিরা পা উপরে রেখে মস্তক অগ্নিকুণ্ডে রেখে সাধনা করতেন। এখন বলতে পারেন এগুলোতো সবার পক্ষে সম্ভব নয়। আগে ঋষিগণ আমাদের মঙ্গলের জন্য সবাইকে পঁচিশ বছর ব্রহ্মচর্য পালন করে বিবাহ করতে বলেছেন কিন্তু এখন আমরা কী তা করি? ব্রহ্মচর্য নষ্ট হলে দেহের শক্তিও হ্রাস পায়। গুরুর তত্ত্বাবধানে কঠোর অনুশীলন পূর্বক ব্রহ্মচর্য পালন করতে পারলে শুধু শীত-গ্রীষ্ম জয় না, সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ সব কিছুর ঊর্ধে যাওয়া সম্ভব। যা হোক, এখন যদি কোন পাশ্চত্য বিজ্ঞানী বলে এতো গেল সামান্য পাখা যন্ত্রের কথা আমরা যে গাড়ি, এরোপ্লেন আবিষ্কার করে পৃথিবীকে গতিশীল করেছি ভারতীয়-দর্শন কী তা পেরেছে? হে মামুলি বিজ্ঞানী, তোমরা ভুলে গেছ ভগবান শঙ্করের কথা যিনি তোমাদের এরোপ্লোনের অধিক গতিতে আকাশ মার্গে উড্ডয়ন করে চলাচল করতেন। শুধু শঙ্কর কেন পরবর্তি যুগের অনেক সন্ন্যাসী এই ক্ষমতা অর্জন করেছেন। এখনো নাকি কুম্ভ মেলায় নাগা সন্ন্যাসীরা আকাশ মার্গে মেলায় আসেন। ভারতীয়-দর্শন বলে এটা রূপকথার গল্প নয়, অষ্ট-সিদ্ধির এক সিদ্ধি হলো লঘিমা এবং সাধনার দ্বারা এই লঘিমা ঐশ্বর্য লাভ করতে পারলে নিজেকে লঘু করে আকাশে ওরা যায়। পাশ্চত্য-দর্শন বলে আমরা রাডার ও স্যাটেলাইট আবিষ্কার করেছি যার সাহায্যে ভবিষ্যতের বিপদ সংকেত দিতে পারছি। শুনে ভারতীয় দর্শন হেসে বলে তোমরা এতো কষ্ট করে এতো পয়সা খরচ করে ভবিষ্যতের বিপদ সংকেত প্রদান করছো তাও অনেক সময় সঠিক হয় না আর আমরা শুধু ভবিষ্যৎ কেন বিনে পয়সায় তোমার চৌদ্দগুষ্ঠির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারি জ্যোতিষ শাস্ত্রের মাধ্যমে যা তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না। রেগে গিয়ে পাশ্চত্য বিজ্ঞানী বলে মূর্খ, ভেবে দেখ আমরা চিকিৎসাবিদ্যার কত উন্নতি করেছি, তোমাদের কতশত মানুষ হাসপাতালের বেডে পড়ে থেকে আমাদের উন্নত চিকিৎসা নিচ্ছে। শুনে ভারতীয় দর্শন মৃদু হাস্যে বলে, তোমরাই তো বল প্রতিরোধ প্রতিকারের চেয়ে উত্তম, আমাদের সনাতন ঋষিরা আহার-বিহারে সংযমের যে বিধান দিয়ে গেছেন তা ঠিকমত মেনে চললে তোমাদের কাছে যাওয়াই তো লাগবে না চিকিৎসা তো পরের কথা। অলৌকিক শক্তি বা মন্ত্র-তন্ত্রের কথা না হয় বাদ দিলাম, শুধু যোগ অবলম্বন করে অনেক রোগ হতে মুক্ত হওয়া যায়। আজকাল তো তোমরাও যোগের পন্থা অবলম্বন করছো। তোমাদের এলোপ্যাথি দ্বারা একটু তারাতারি রোগ সারে বটে কিন্তু এতে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া আছে ফলে এক রোগ সারতে গিয়ে আরেক রোগ সৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু আমাদের আয়ুর্বেদে কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই। তাছাড়া এলোপ্যাথি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। রোগ সারিয়ে তোমরা এত গর্ব করছ কেন? মনে রেখ অনেক রোগই এমনিতে সেরে যায় আর দুরারোগ্য ব্যধি সারানোর গ্যারান্টি তোমরা দিতে পার না। ঈশ্বর যে রোগী মারবে তোমাদের বাপের সাধ্য নাই তাকে বাঁচানোর। রাখে হরি মারে কে, মারে হরি রাখে কে? সুতরাং মিথ্যা গর্ব তোমরা কর না। আজকে বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য জলবায়ুর যে পরির্তন ঘটছে তার জন্য তোমাদের আধুনিক বিজ্ঞান দায়ী এটাতো তোমরাও মানো। তোমাদের যন্ত্রপাতি কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি করছে ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে। তাপমাত্রা কমানোর জন্য তোমরা এসি, ফ্রিজ আবিষ্কার করছো। ঐ এসি, ফ্রিজের ক্লোরো-ফ্লোরো কার্বন ওজন স্তর ধ্বংস করছে ফলে পৃথিবীতে অতি-বেগুনী রশ্মি প্রবেশ করে জীবের ক্ষতি করে চলছে। তোমরাই সমস্যা সৃষ্টি করছ আবার তোমরাই বহু অর্থ ব্যয় করে তার সমাধানের চেষ্টা করছ আবার ভারতীয় দর্শনকে অবজ্ঞা করছ, যা সত্যি হাস্যকর। কিন্তু দুঃখ একটাই বর্তমান যুগের তরুনদের এসব কে বোঝাবে? তারা তো দিনদিন পাশ্চত্য সংস্কৃতিকে গ্রহণ করে চলছে। ভগবান এদের চৈতন্য দেবেন কবে?

হিন্দুধর্ম ও বিজ্ঞান (পর্ব-)

    বিবর্তনবাদের জনক ডারউইন বলেছিলেন এক প্রজাতির বানর রূপান্তরিত হয়ে মানুষে পরিণত হয়েছে। এই তত্ত্ব সব বিজ্ঞানী মেনে নেন নি। কারণ ঠিক কি কারণে ঐ প্রজাতির বানরের বিবর্তন ঘটে মানুষে পরিবর্তন ঘটেছে? কী করে লেজ বিলুপ্ত হয়েছে? এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ডারউইন দিতে পারে নি। সম্ভবও নয়। ডারউইন বিবর্তনবাদের ব্যাখ্যা ভালভাবেই দিতে পারতেন যদি হিন্দুধর্মের পুনর্জন্ম তত্ত্ব তার জানা থাকত। আপনারা ব্যাসদেবের পুরাণ ঘাটলে সেখানে দেখবেন, চুরাশি লক্ষ যোনি ভ্রমণ শেষে মানব জনম লাভ হয়। তবে মানব জন্ম লাভের পর কর্মফল অনুসারে সে মুক্তিও পেতে পারে আবার নিম্ন যোনিও লাভ করতে পারে। অর্থাৎ কর্মফলের হিসেব শুধু মানব জন্মেই। ডারউইনের তত্ত্বের সাথে মুনি-ঋষিদের তত্ত্বের একটু পার্থক্য আছে। ডারুইন বলেছেন বানর থেকে মানুষ হয়েছেন আর মুনি-ঋষিরা বলছে মানুষের আগের জন্ম বানর। অর্থাৎ চার বছর বানর যোনি ভ্রমণ শেষে স্বতঃস্ফুর্তভাবে মানব জনম লাভ হয়। ডারুইন বলেন ঐ প্রজাতীর বানর বিলুপ্ত হয়েছে কারণ তারা মানুষে পরিণত হয়েছে। তাহলে তার সূত্র মতে একদিন মানুষেরও বিবর্তন ঘটার কথা অর্থাৎ মানুষও অন্য প্রাণীতে রূপান্তর হয়ে যাওয়ার কথা, কারণ মানুষ তো ঐ বানরের জিন বহন করছে। কিন্তু তা তো হচ্ছে না। অন্যদিকে ঋষিরা বলেছেন মানুষ হতে গেলে বানরের বিলুপ্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রতিনিয়ত বানরের আত্মা মানব জন্ম লাভ করছে আবার মনুষ বানরের মত কর্ম করে বানর যোনি লাভ করছে। আপনারাই বলুন কোন তত্ত্ব সঠিক ডারুইনের আধুনিক বিবর্তনবাদ না প্রাচীন হিন্দু ঋষির মতবাদ। পৃথিবী যতই আধুনিক হোক মুনি-ঋষিদের প্রাচীন তত্ত্ব উপেক্ষা করার শক্তি কারোর নেই। হে নাস্তিকগণ, যারা ডারুইনের তত্ত্ব দিয়ে হিন্দুধর্মকে অস্বীকার করেন তারা একটু আমার কথাগুলো ভেবে দেখবেন। আপনাদের আধুনিক বিজ্ঞানীরা অনেক যন্ত্রপাতি দিয়ে সরকারের অনেক পয়সা নষ্ট করে যে সব তত্ত্ব আবিষ্কার করছেন তা বহু পূর্বেই মুনি-ঋষিরা বিনা পয়সায় আবিষ্কার করে গেছেন। ঈশ্বর মহান।

(আমা কর্তৃক লিখিত “হিন্দুধর্মের সারকথা” পুস্তক থেকে সঙ্কলিত)


কোন মন্তব্য নেই

Akash Bairagi. Blogger দ্বারা পরিচালিত.