Header Ads

ঈশ্বর কথা

Padma

 ঈশ্বর

সর্বদা ঈশ্বরের নাম শ্রবণ তাঁহার মহিমার উপাসনা করিবে। তাঁহার অসীম দয়ার মনন স্মরণ বিস্মৃত হইবে না। “সত্যং শিবং সুন্দরম্” সত্য স্বরূপ পরম পুরুষকে সত্য ধ্যান করিবে। সাধকের প্রথমতঃ নাম জপ করা ভাল। নাম দ্বারা নামীকে মনে পড়ে, ইহাতে মন পবিত্র হয়। সকলের মধ্যে একই ঈশ্বর বিরাজমান, ইহা উপলব্ধি করিতে সতত চেষ্টা করিবে। সর্বজীবে সমদর্শী সমদয়া আধ্যাত্মিক জীবন লাভের প্রশস্ত পথ। সকল সময় সকল অবস্থাতে ভগবানের স্মরণ করিতে তাঁহার সান্নিধ্য অনুভব করিবে। সর্বদর্শী সর্বশক্তিমান পরম ঈশ্বর সবই দেখিতেছেন ইহা যেন সর্বদা মনে থাকে। তাহা হইলে তোমার অন্যায় কাজে মতি হইবে না, মতি হইলেও অনেকাংশে রক্ষা পাইবে। নির্মল চিত্ত ব্যক্তি ধ্যান অবস্থায় ভগবানের সত্ত্বা উপলব্ধি করিতে পারেন। নির্মল দর্পনেই মুখচ্ছবি প্রতিফলিত হয়, সেইরূপ নির্মল আত্মাতে সর্বব্যাপী চৈতন্য প্রকাশমান হন। বিষয় বিমুঢ় সকল আত্মা ঈশ্বরকে দেখিতে পায় না। মেঘ আমাদের চক্ষুকে ঢাকিয়া রাখে কিন্তু সুর্য্যকে ঢাকিয়া রাখিতে পারে না, হৃদাকাশ হইতে মোহরূপ মেঘ অন্তর্হিত হইলে চৈতন্য স্বরূপ সুর্য্য প্রকাশিত হয়। নিদ্রাকালে চক্ষু, কর্ণ, হস্ত, পদাদির কার্য্য থাকে না, সেইরূপ বাহ্যিক বিষয় হইতে মন নিরুদ্ধ হইলে চিত্ত মধ্যে স্বরূপতঃ পরমাত্মার সত্তা উপলব্ধি হয়।

মানুষ বড় অসহায় জীব। সে বিপদ রাশি দ্বারা সতত পরিবেষ্টিত। প্রতিক্ষণেই তাহার নানা বিপদ বিঘ্ন দুঃখ ঘটিতে পারে, মানুষের অজ্ঞাত সারেও বহু বিপদ ঘটে, এই অবস্থায় সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই মানবের একমাত্র উপায় রক্ষাকর্ত্তা এবং অগতির গতিদায়ক। বিপদকালে যে ব্যক্তি অধীর না হইয়া ভগবানের উপর সম্যক নির্ভর করে ভগবান তাহার অন্তরে বিপদ উদ্ধারের পথ প্রদর্শন করেন। যাহার যাবতীয় কর্মই ঈশ্বরেই অর্পন করে তাহাদের কার্য্য সুফলপ্রসু হয়। ভগবানে নির্ভরশীল হইলে বিপত্তি বিনাশ পায়। সকল অবস্থায় মঙ্গলময় ঈশ্বরের মঙ্গলময়ী ইচ্ছার উপর নির্ভর করিবে। তিনি যাহা করেন জীবের মঙ্গলের জন্যই বটে। মঙ্গলময়ের কার্য্যে অমঙ্গল নাই, তোমার পা পিছলে কাদাঁয় পড়িয়া সুন্দর বস্ত্রের মলিনতা প্রাপ্ত হইয়াছে সঙ্গে সঙ্গে মনও বিরস হইল কিন্তু মনে রাখিবে, মঙ্গলময় অতি অল্পে রক্ষা করিয়া তোমাকে চিরতরে খোঁড়া হওয়ার থেকে রক্ষা করিয়াছেন, তাই তিনি যাহা করেন সাধারণের হিতার্থেই করেন। ভগবানে নির্ভরশীল হইলে মৃত্যুকালীন যন্ত্রণা হইতেও রক্ষা পাইবে।

পরকালের জন্য কি করিতেছ? দেহক্ষণ ভঙ্গুর শরীর ব্যাধি মন্দির। আয়ু প্রতি পলেই ক্ষয় হইতেছে। কখন জীবন প্রদীপ নির্বাপিত হইবে তাহার বিন্দুমাত্র স্থিরতা বা নিশ্চয়তা নাই, তাই যাহা গেছে-গেছে, এখন হইতে সাবধান হও। ধর্মমন উপার্জ্জন কর, ইহা চিরস্থায়ী ধন। ভগবৎ প্রেম মানুষের প্রধান ধর্ম। জীবের প্রতি প্রেম করিলে পরোক্ষে ভগবানের প্রতিই প্রেম করা হয়।
                                                 বহুরূপে সম্মুখে তোমার
                                                 ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর-
                                                 জীবে প্রেম করে যেই জন
                                                 সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।.....স্বামীজী

ভিক্ষার্থীকে ভিক্ষা দিলে, বিপন্নকে সাহায্যে করিলে, ক্ষুধার্তকে অন্ন দিলে, স্থুল কথায় বিত্ত শাঠ্য না করিয়া পরোপকারে আত্মোৎসর্গ করিলে ঈশ্বর তাহার সকল দিকেই মঙ্গল বিধান করেন। সত্য পালনই ধর্ম, যেমন পাঠাভ্যাসে বিদ্যা রক্ষা হয়, মার্জ্জনদ্বারা পাত্র রক্ষা হয়, সৎ স্বভাবে কুল রক্ষা হয় সেইরূপ সত্য পালনে ধর্ম রক্ষা হয়। বিবেচনা দ্বারা কর্তব্য কর্মের অনুষ্ঠান না করা বা কর্তব্য কর্ম না করা অধর্ম সুতরাং পাপ। কর্মের মাধ্যমেই পাপপূণ্য ধর্মাধর্ম পরিলক্ষিত হয়। কার্য্য দ্বারাই ধার্মিকের পরিচয় মিলে। ধার্মিক লোক সবার পূজ্য। সাধারণের হিতকর কার্য্য করিবে। বিশ্বের হিত করিলে বিশ্বপতি প্রীত হন, কারণ তিনি বিশ্বের আত্মা, বিশ্ব তাঁহাকে আশ্রয় করিয়া আছে। 


আহারের জন্য বাঁচিয়া থাকা নয়, বাঁচিয়া থাকার জন্যই আহার করা। তেমনি ঈশ্বরের প্রীতিজনক কার্য্য করার জন্যই মানব দেহ ধারণ করা, অন্যথা পশু জনম বা নর পশুতে পরিণত হইতে হয়। সত্য সরল ভগবানকে ভুলিয়া কোন কার্য্য করিবে না, কেবল আত্মসুখ কামনায় কার্য্য করিলে ইহাতে বিপরীত ফলদায়ক অবস্থার উদ্ভব হয়। যাবতীয় কার্য্য হিতাহিত বিবেচনা পূর্বক ঈশ্বরে নির্ভর করিয়া করিলে উহা নির্দ্দোষ সুখকর হয় পরন্তু বন্ধনের ভয় থাকে না  বা কারণ হয় না, ইহাতে মুক্তির পথ উন্মুক্ত হয়। ঈশ্বরের লীলা অনন্ত, কার্য্য অনন্ত, কে কতটুকু কি কার্য্য করিল তাহা তিনি দেখেন না। তিনি কার্য্যরে অভিপ্রায় দেখেন। সৎ অভিপ্রায় লইয়া কার্য্য করিলে বিফল হইলেও তিনি তুষ্ট হন। ভগবানের কার্য্য ছোট বড় ভেদ নাই, ভেদাভেদ কেবল আমাদের কাছে। তাঁর নিকট সকল কার্য্যই সমান। তিনি তোমাকে যে কার্য্যরে শক্তি দিয়াছেন, তাহার সদ্ব্যবহার করিলেই তিনি প্রীত হন। যথাসাধ্য অন্যের হিতে ব্রতী হইবে, উপকার করিতে না পার তাহাতে ক্ষতি নাই। কিন্তু কাহারও অপকারের ইচ্ছা পোষণ করিও না। তাহাতে অন্তর কলুষিত হয়।

মনুষ্য জীবন কার্য্য চিন্তা লইয়া, সৎকার্য্য সদ্চিন্তা দ্বারা নরগণ, দেবগণ ভগবানকে সন্তুষ্ট রাখিবে, তাহাতে ভক্তি জন্মিবে। ভগবান জ্ঞানাতীত, মায়াতীত, কিন্তু ভক্তের অধীন রয় চিরদিন। সব তন্ত্র মন্ত্রের শেষ কথা আমি তোমার- এটার নামই ভক্তি এবং তুমি আমার- এটার নামই প্রেম।

রিপুগণকে বশে রাখিবে, রিপুর বশীভূত হইও না। যাহারা রিপুর অধীন তাহারা বনে থাকিলেও মনে পাপ কর্মের অনুষ্ঠান করে। যাহারা ইন্দ্রিয়গণকে বাধ্য করিতে পারিয়াছে তাহারা গৃহে থাকিয়াও তপশ্চরণ করে। ধর্মে জীবনের কেন্দ্রস্থির করিও। কেন্দ্রচ্যুত হইও না। কেন্দ্র স্থির হইলেই জীবন সুখকর হইবে। চিত্ত চাঞ্চল্য ধর্মসাধনের এক প্রধান অন্তরায়। হরি কথায় সৎ প্রসঙ্গে চঞ্চল চিত্তকে সংযত করিতে অভ্যাস কর। চিত্ত সংযমে মন পবিত্র হয়, মন পবিত্র হইলে ব্রহ্ম দর্শন হয়। চিত্ত সংযমই সুখের দ্বার স্বরূপ।

আসক্তি হইতে সকল দুঃখের উৎপত্তি হয়। বিষয় তৃষ্ণা নানা উদ্বেগের কারণ, বিষয় তৃষ্ণা না ছাড়িলে মানুষ কখনও প্রকৃত সুখী হইতে পারে না। অল্প অগ্নি যেমন করিয়া আস্তে আস্তে বৃহৎ কাষ্ঠখন্ডকে দগ্ধ করে তেমনি সামান্য বিষয় বাসনাও বলবতী হইয়া সকল প্রকার ধর্ম ভাবকে নষ্ট করিয়া দেয়। বিষয় বিষ হইতে ধর্মের প্রাণহানি ঘটে।

মৃত্যুতেই জন্ম, পুরাতন ত্যাগ না করিলে নুতন আসে না। বিষয় শক্তি না ছাড়িলে ভগবদাসক্তি জন্মে না। সংসার রাজ্যের মৃত্যু না ঘটিলে ধর্মরাজ্যের জন্ম হয় না। ভগবানের দান মাত্রই জগতের হিতে কাম ক্রোধাদি যে সকল বৃত্তি সমূহ তিনি দিয়াছেন সে সবই উপকারী কেবল আমাদের ব্যবহার দোষে ইহারা কুফল উৎপন্ন করে। যেমন অগ্নি দ্বারা রান্নার কাজ শীতের অসহ্য কষ্ট হইতে রক্ষা পাওয়া যায়, কিন্তু সেই অগ্নিই ঘরের চালে সংযোগ করিলে, স্থাপিত ধন সবই ভস্ম হয়। অমঙ্গল হইতে মঙ্গলের উৎপত্তি হয়। সে বিষ মানুষের প্রাণহানি করে তাহাই প্রয়োগ ক্রমে অমৃতের ন্যায় বিকারী রোগের প্রাণ রক্ষা করে। সুখে দুঃখে একই ভাবপন্ন থাকিতে চেষ্টা করিও দেখিবে বিপত্তি তোমার অনেক দূরে। ঈশ্বর যাহা কিছু সৃজন করিয়াছেন সবই দরকারী এবং তিনি সকল প্রাণীতে বিদ্যমান বিধায় কোন প্রাণীই ঘৃণ্য নয়।

শ্রী শ্রী পরমহংস মহাযোগী শ্রীমৎ স্বামী সুরেশ্বরানন্দ পুরী গুরুমহারাজ

ঈশ্বর সম্পর্কে আরও জানতে হিন্দুধর্মের সারকথা বইটি পড়ুন

কোন মন্তব্য নেই

Akash Bairagi. Blogger দ্বারা পরিচালিত.