Header Ads

হিন্দুদের ধর্মশাস্ত্র

ধর্মগ্রন্থ



হিন্দুদের ধর্মশাস্ত্রকে প্রধানত ৪টি ভাগে বিভক্ত করা যায়, যথা- শ্রুতিশাস্ত্র, স্মৃতিশাস্ত্র, পুরাণ ঐতিহাসিক ধর্ম গ্রন্থ। নিচে এসব হিন্দুধর্মীয় গ্রন্থসমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেয়া হল

) শ্রুতিশাস্ত্র 

শ্রুতিশাস্ত্রের মূল অর্থ হল সাধন বা ধ্যানযোগে পরমেশ্বরের বাণী শ্রবণ করে গুরুশিষ্য পরস্পরায় যা ধরে রেখেছিলেন তার থেকে সৃষ্ট গ্রন্থসমূহ। এর মূল গ্রন্থসমূহ হল- বেদ, উপনিষদ, গীতা, শ্রী শ্রী চণ্ডী ইত্যাদি।

বেদ

ধাতুগত অর্থের দিক থেকে বেদ হল জ্ঞান বা বিদ্যা। বিদ্যা দুই প্রকার, যথা- পরাবিদ্যা বা পরম ব্রহ্ম বিষয়ক জ্ঞান এবং অপরা বিদ্যা বা লৌকিক জ্ঞান। বেদের সৃষ্টি কর্তা কোন একজন পুরুষ নহেন। ঋষিদের ধ্যান উপলদ্ধ জ্ঞান থেকেই বেদের সৃষ্টি, তাই বেদ অপৌরুষেয়। পণ্ডিতদের অনেক মত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও পণ্ডিত-প্রবর তিলক জ্যাকবি এর মতে অন্তত খ্রিঃ পুঃ ৪০০০ অব্দের মধ্যে বেদ রচিত হয়েছিল। মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদকে  ভাগে ভাগ করেন, যথা-ঋক, সাম, যজু অর্থব। ঋক অর্থ মন্ত্র। তাই ঋক বেদে মন্ত্রের মাধ্যমেই দেবতাদের স্ততি করা হয়েছে। ঋক বেদে মোট ১০টি মণ্ডল, ১০২৮ টি সূক্ত এবং ১০৫৫২টি ঋক বা মন্ত্র রয়েছে। সাম অর্থ সঙ্গীত। তাই সামবেদে উল্লিখিত মন্ত্রগুলো যজ্ঞের সময় সুর করে গাওয়া যত। সামবেদে মন্ত্র সংখ্যা ১৮১০ টি। ক্রমানুযায়ী সামবেদের পরেই যজুর্বেদের অবস্থান। যজ ধাতুর অর্থ যোজন করা। তাই যজুর্বেদ অর্থে যজ্ঞ সম্বন্ধীয় বেদ বুঝায়। যজুর্বেদ দুই ভাগে বিভক্ত যথা- শুক্লযজুর্বেদ কৃষ্ণযজুর্বেদ। শুক্লযজুর্বেদে ৪০টি অধ্যায়, ৩০৩টি অনুবাক ১৯১৫টি কণ্ডিকা বা মন্ত্র রয়েছে। কৃষ্ণযজুবেদের তৈত্তিরীয় শাখাতে মোট টি কাণ্ড, ৪৪টি প্রশ্ন, ৬৪৪টি অনুবাদ ১৯১৫টি কণ্ডিকা বা মন্ত্র রয়েছে। সবশেষে অথর্ববেদে ভোজবিদ্যা, ব্যাধি নিরাময়, পুত্রেষ্টিক্রিয়া, অনাবৃষ্টি নিবারণ, শত্রু বধ, উচাটন ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে। অর্থবেদের শৌনিক শাখায় মোট ৫৯৭৭ টি মন্ত্র সঙ্কিলত হয়েছে।

ব্রাহ্মণ

বৈদিক সাহ্যিতে ব্রাহ্মণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যে গ্রন্থে পুরোহিতগনের নেতৃত্বে, যজ্ঞ তার বিধিবিধান আলোচিত হয় সে গ্রন্থই ব্রাহ্মণ নামে খ্যাত। বেদশাস্ত্র সঠিকভাবে পাঠ করার জন্য ৬টি বেদাঙ্গ রয়েছে। যথা- শিক্ষা (পাণিনি), কল্প (বিভিন্ন ঋষি সম্প্রদায়), ব্যাকরণ (পাণিনি), নিরুক্ত (যাস্ক), ছন্দ (পিঙ্গলাচার্য), জ্যোতিস্ক (গর্গ) মূল ৪টি বেদ ছাড়াও ৪টি উপবেদ আছে যেমন- আয়ুর্বেদ, ধনুর্বেদ, গন্ধর্বেদ, অর্থশাস্ত্র ইত্যাদি।

আরণ্যক উপনিষদ

বেদের দুটি শাখা- একটি আরন্যক অপরটি উপনিষদ। অরণ্যে বসে যা রচিত তাই আরন্যক। উল্লেখযোগ্য আরণ্যকগুলো হল- ঐতরেয়, কৌষীতকি, শতপথ ব্রাহ্মণ, ছান্দোগ্য ইত্যাদি। উপনিষদ হল গুরুর নিকট হতে প্রাপ্ত জ্ঞান। আচার্য শঙ্করের মতে ১০টি প্রধান উপনিষদ আছে যার মুখ্য উদ্দেশ্য হল ব্রহ্মবিদ্যা অর্জন। ১০টি উপনিষদ হল-বৃহদারণ্যক, ছান্দোগ্য, তৈত্তিরীয়, ঐতরেয়, ঈশ, কেন, কঠ, প্রশ্ন, মুণ্ডক মাণ্ডূক্য। উপনিষদের পাঁচটি মূলতত্ত্ব হল-সর্বত্রই ব্রহ্ম বিরাজিত, বহুত্বের মধ্যে ব্রহ্মের একত্ব, ব্রহ্ম অন্তরস্থিত হয়েও বিশ্বনিয়ন্তা, ব্রহ্ম রস স্বরুপ ব্রহ্ম আনন্দ স্বরুপ।

গীতা

মহাভারতের ভীষ্ম পর্বের শুরুতে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যে কালজয়ী তত্বজ্ঞান উপদেশ দিয়েছিলেন তার সংকলনই শ্রীমদভগবত্ গীতা। গীতায় ১৮টি অধ্যায় ৭০০ শ্লোক রয়েছে। এটি একটি নিত্যপাঠ্য গ্রন্থ।

শ্রী শ্রী চণ্ডী

মার্কণ্ডেয় পুরাণের একটি অংশের নাম শ্রী শ্রী চণ্ডী। চণ্ডী শব্দের অর্থ পরম ব্রহ্ম-মহিষী বা ব্রহ্ম শক্তি। এতে ব্রহ্ম শক্তি দুর্গার স্তুতি রয়েছে। চণ্ডীতে ঈশ্বর মাতৃজ্ঞানে পূজিত হন। চণ্ডীতেও গীতার মত ৭০০ শ্লোক রয়েছে।

) স্মৃতিশাস্ত্র

বিভিন্ন ঋষিদের স্মৃতি বাণী যে গ্রন্থে পাওয়া যায় তাই স্মৃতিশাস্ত্র। যে কুড়িটি স্মৃতিশাস্ত্রের পরিচয় পাওয়া যায় তা হল- মনুসংহিতা, অত্রি, বিষ্ণু, হারিত, যাজ্ঞবাল্ক, পরাশর, ব্যাস, উশনা, অঙ্গিরা, যম, অপস্তম্ভ, সম্বর্ত, কাত্যায়ন, বৃহস্পতি, শঙ্খ, লিখিত, দক্ষ, গৌতম, শততাপ বশিষ্ঠ নামক স্মৃতিশান্ত্র।

) পুরাণ 

পুরাণ শব্দের অর্থ পুরাতন। পুরাণ বেদের পরবর্তীকালে রচিত হয়েছে। বেদে জ্ঞান কর্মকাণ্ডের প্রাধান্য ছিল। পুরাণের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের ভক্তিবাদ মূর্তিপূজার সূচনা হয়। পুরাণ অনেক তবে মহাপুরাণ ১৮টি এবং সেগুলো হল ব্রহ্মা, শিব, পদ্ম, বিষ্ণু, ভাগবত, মার্কাণ্ডেয়, অগ্নি, ভবিষ্য, ব্রাহ্মবৈবর্ত, মৎস্য লিঙ্গ, বরাহ, কুর্ম, গরুড়, ব্রহ্মাণ্ড, নারদীয়, স্কন্দ বায়ু পুরাণ। ভাগবতে কথিত আছে যে, পুরাণের মধ্যে ভাগবত শ্রেষ্ঠ। ভাগবতে ১২টি স্কন্দ ৬২০০০টি শ্লোক রয়েছে। ব্যাসদেব দেবর্ষি নারদকে যে উপদেশ দিয়েছিলেন এবং শ্রী হরির গুণ লীলার যে বর্ণনা করেছিলেন তাই ভাগবত। ব্রহ্মজ্ঞানী শুকদেব সর্বপ্রথম পিতা ব্যাসদেবের নিকট ভাগবত শোনেন এবং তা রাজা পরীক্ষিতকে শোনান। ভাগবতের মূলতত্ত্ব হল ভক্তি।

) ঐতিহাসিক ধর্ম গ্রন্থ

মূলত রামায়ণ মহাভারতকেই ঐতিহাসিক ধর্মগ্রন্থ বলা হয়ে থাকে। রামের জন্মের ৫০ বছর পূর্বে ঋষি বাল্মীকি কর্তৃক রামায়ণ রচিত হয় রামায়ণে ৭টি কান্ড যথা-আদি, অযোধ্যা, অরণ্য, কিষ্কিন্ধ্যা, সুন্দরা, লঙ্কা উত্তরা। এতে ২৪০০০টি শ্লোক রয়েছে। মহাভারত রচনা করেন কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস। মহাভারতে কৌরব আর পাণ্ডবদের মধ্যে যুদ্ধ বর্ণিত আছে। যুদ্ধে সত্যধর্ম অবলম্বনকারী পাণ্ডবদের জয় হয়।  মহাভারতে ১৮টি পর্ব ৮৫০০০ শ্লোক রয়েছে। পর্ব গুলো হল- ১। আদি ২। সভা ৩। বন ৪। বিরাট ৫। উদ্যোগ ৬। ভীষ্ম ৭। দ্রোণ ৮। কর্ণ ৯। শৈল্য ১০। গদা ১১। সৌপ্তিক ১২। ঋষীক ১৩। স্ত্রী ১৪। শান্তি ১৫। অশ্বমেধ ১৬। আশ্রমিক ১৭। মুষল ১৮। স্বর্গারোহণ পর্ব।

এছাড়াও বিভিন্ন কাব্য, মহাকাব্য, পদাবলী, তন্ত্রশাস্ত্র প্রভৃতি গ্রন্থও ধর্মগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। হিন্দুধর্মে ষড়দর্শনও বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ষড়-দর্শন হল- ১। স্যাংখ্য (কপিল) ২। যোগ (পতঞ্জলি) ৩। ন্যায় (গৌতম) ৪। বৈশেষিক (কণাদ) ৫। পূর্ব মীমাংসা (জৈমিনি) ৬। উত্তর মীমাংসা (বেদব্যাস)

ব্রহ্মজ্ঞান বিভিন্ন উপায়ে লাভ করা যায়। তবে তার মধ্যে একটি উপায় হল ধর্মগ্রন্থ পাঠ। বিশেষ করে ছাত্রজীবনে ধর্মগ্রন্থ পাঠের কোন বিকল্প নেই, কারণ শাস্ত্রে বলা হয়েছে- ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ। তবে শুধু পাঠ করলেই চলবে না সাথেসাথে সেই অনুসারে সকলকে চরিত্র গঠন করতে হবে। আর তাতেই জীবনের চরম সার্থকতা।

1 টি মন্তব্য:

  1. আকাশগঙ্গা শব্দের সংযোগ বেদে বা অন্য গ্রন্থের আছে কিনা

    উত্তরমুছুন

Akash Bairagi. Blogger দ্বারা পরিচালিত.