Header Ads

হিন্দু নারীরা শাঁখা-সিঁদুর পড়েন কেন

হিন্দু নারীগণের শাঁখা-সিঁদুর ধারণের রহস্য

ইদানিং অনেক হিন্দু-বধুগণ শাঁখা-সিঁদুর ধারণ করিতে লজ্জ্বা পান, কেহ কেহ সমিহ বোধ করেন। অনেক নব-পরিণীতাগণ শাঁখা-সিঁদুরকে অধুনা-সংস্কৃতির পরিপন্থী বালয়া মনে করেন, কেহ কেহ কুসংস্কার বলিয়া উড়াইয়া দিতেও কুণ্ঠা বোধ করেন না। কতিপয় নববধু আছেন যাহারা কেবলই নিয়ম-রক্ষার নিমিত্ত শাঁখা-সিঁদুর ধারণ করিয়া থাকেন। আবার কেহ কেহ সিঁদুর ধারণ করেন বটে কিন্তু তাহা বিশেষ উপায়ে কেশ-বিন্যাসের দ্বারা এরূপে আড়াল করিয়া রাখেন যেন ইহা দৃষ্টিগ্রাহ্য না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এহেন হিন্দু-সংস্কারকে আমি কুসংস্কার বলিব না। প্রকৃতপক্ষে এই সংস্কারের পশ্চাতে এক সূক্ষ্ম ও গভীর দর্শন লুকাইয়া আছে যাহা অতি মহৎ ও উদার। সহজ কথায় একজন নারীর শাঁখা-সিঁদুর ধারণ করিবার অর্থ তিনি বিবাহিত অর্থাৎ তিনি সংসার জীবনে প্রবেশ করিয়াছেন। কেহ কেহ বলিয়া থাকেন যে, স্ত্রী তাহার পতির মঙ্গল কামনায় শাঁখা-সিঁদুর ধারণ করিয়া থাকেন। কিন্তু আমি বলিব ইহা সম্পূর্ণ সত্য নহে। কারণ কোন স্বামীতো স্ত্রীর মঙ্গল কামনায় কোন বিশেষ কিছু ধারণ করেন না তবে মঙ্গল কামনার দায় শুধুমাত্র স্ত্রীর হইবে কেন? 
শাঁখা-সিঁদুর

প্রকৃতপক্ষে সংসারী মানুষ প্রকৃতির সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই তিনগুণের অধীন। ত্রিগুণের সত্ত্ব উত্তম, রজঃ মধ্যম এবং তমঃ অধম গুণ হইলেও ইহারা একে অন্যের পরিপূরক। এক কথায় বলিলে জ্ঞান-বুদ্ধি সত্ত্বগুণ, কর্ম রজোগুণ এবং অবিদ্যা বা অজ্ঞানতা তমোগুণকে নির্দেশ করে। সাদা বর্ণ দ্বারা সত্ত্ব গুণ, লাল বর্ণ দ্বারা রজঃ গুণ এবং কাল বর্ণ দ্বারা তমঃ গুণ প্রকাশ করা হইয়া থাকে। রজোগুণ সংসারের চালিকা-শক্তি। অধিকন্তু সংসারকালে নারীরা রজঃস্বলা হন যাহা রজোগুণের লক্ষণ এবং পতির সাহিত যে মিলনে রত হন তাও রজোগুণকেই নির্দেশ করিয়া থাকে। তাই সংসারে নারীদের রজোগুণেরই প্রাধান্য লক্ষ্য করা হয়। মস্তক দেহের প্রধান অঙ্গ। সুতরাং মস্তকে লাল বর্ণের সিঁদুর ধারণের অর্থ বিবাহিত নারীদের নিকট রজোগুণই প্রধান কারণ লাল বর্ণ রজঃ গুণের প্রতীক। হস্ত কর্মের প্রতীক। অতেএব নারীর হস্তে সাদা শাঁখা ও লাল পলা ধারণের অর্থ তার কর্ম হইবে সত্ত্ব ও রজোগুণের সমন্বয়ে। তমোগুণকেও উপেক্ষা করা যায় না। সংসারের মায়া-মমতা, নিদ্রা, রন্ধন, পরিষ্করণ তথা বিভিন্ন সেবামূলক কর্ম শাস্ত্রমতে তমঃগুণই বটে। এইজন্য নারীরা হস্তে লৌহ-নির্মিত কালো চুড়ি পড়িলেও মন্দ হয় না। মোট কথা একমাত্র নারীর মধ্যেই প্রকৃতির সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই তিন গুণই সুন্দর রূপে ফুটিয়া উঠে। এই কারণে নারীকে অনেকে প্রকৃতি বলিয়া থাকেন আবার কেহ বা প্রকৃতিকে নারীর সহিত তুলনা করিয়া থাকেন। সুতরাং শাস্ত্রমতে নারীরা রজোগুণকে আশ্রয় করিয়া কর্ম করেন বটে তবে তাহার মধ্যে তিনগুণেই সময়ভেদে স্পষ্ট হইয়া ওঠে আর এইসব বুঝাইতেই তাহারা সাদা, লাল ও কাল বর্ণযুক্ত শাঁখা-সিঁদুর, লাল পলা ও লৌহ চুড়ি ব্যবহার করিয়া থাকেন। তবে বিধবাদের রজোগুণ-সম্পন্ন কর্মে অধিকার নেই। সত্ত্বগুণই তাহার প্রধান অবলম্বন। তাই বিধবাগণ সাদা বস্ত্র পরিধান করেন এবং লাল বস্ত্র তাহাদের নিষিদ্ধ। পরিশেষে আমি বলিতে চাই কয়জন নারী সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ গুণকে উপলব্ধি করিয়া শাঁখা-সিঁদুর ধারণ করেন? কিন্তু উপলব্ধি নাই বা হইল কুমারী, বিবাহিতা আর বিধবাদের তো চিহ্নিত করা গেল আর সমাজে ইহা কত প্রয়োজন তাহা সহজেই অনুমেয় এবং আমার তাহা জানানো নিষ্প্রয়োজন।

কোন মন্তব্য নেই

Akash Bairagi. Blogger দ্বারা পরিচালিত.