Header Ads

বারদীর বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী



লোকনাথ ব্রহ্মচারী একজন ত্রিকালদর্শী, জাতিস্মর ও মুক্তপুরুষ ছিলেন। লোকনাথ ব্রহ্মচারীর জীবনী লক্ষ্য করলে সেখানে অদ্বৈত-দর্শনই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি জীবে-শিবে অভেদ জ্ঞান করতেন। ভক্তদের তিনি ঐশী শক্তির মাধ্যমে ঈশ্বর ও ধর্ম সম্পর্কে যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন, তা অতুলনীয়। লোকনাথ ব্রহ্মচারী পাহাড়-পর্বতে, বনে-জঙ্গলে বহু ক্লেশ সহ্য করে যে ধন উপার্জন করেছেন, তা লোকালয়ে এসে সাধারণ মানুষে মাঝে অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। নিম্নে বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর জন্ম, গুরু, সাধনা, লোকশিক্ষা, অলৌকিক লীলা ও মৃত্যু সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করা হল।

লোকনাথ ব্রহ্মচারী আনুমানিক ১১৩৮ বঙ্গাব্দের ১৮ই ভাদ্র চবিবশ পরগনা জেলার বারাসাত মহকুমার অন্তর্গত কচুয়ায় মতান্তরে উত্তর চবিবশ পরগণা জেলার চাকলা গ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিতা রামকানাই ঘোষাল এবং মাতা কমলাদেবীর চতুর্থ সন্তান। ভগবান গঙ্গোপাধ্যায় লোকনাথ ও তাঁর বাল্যবন্ধু বেণীমাধব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীক্ষাও উপনয়ন সংস্কার করে তাঁদেরকে নিয়ে পরিব্রাজন করতে হিমালয়ে চলে যান। তাঁরা হিমালয় ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন স্থানে পর্যটন ও সাধনা করতে থাকেন। লোকনাথ ও বেণীমাধবের বয়স যখন ৯০ বৎসর তখন গুরু ভগবান গাঙ্গুলী তাঁদেরকে হিতলাল মিশ্রের (মতান্তরে ত্রৈলঙ্গস্বামী) নিকট সমর্পণ করে দেহত্যাগ করেন। তারপর তাঁরা গুরুর তত্ত্বাবধানে হিমালয় ও তিববতের নানা পার্বত্য স্থানে পর্যটন করেন।
লোকনাথ ব্রহ্মচারী

লোকনাথ চীন, তীব্বত ছাড়াও আরব দেশের মক্কা ও মদীনা ভ্রমণ করেন। মক্কায় তাঁর সাথে আব্দুল গফুর নামক এক ফকিরের সাক্ষাৎ হয়। লোকনাথের ভাষ্যমতে যোগ-সিদ্ধ পুরুষ আব্দুল গফুরের বয়স ছিল ৪০০ বৎসর। লোকনাথ ভক্তদের বলতেন যে তিনি তিন জন ব্রাহ্মণ দেখেছেন-একজন ত্রৈলঙ্গ স্বামী, একজন মক্কার আব্দুল গফুর এবং আরেকজন তিনি নিজে। এভাবে বহুকাল কেটে যাওয়ার পর গুরু তাঁদের লোকালয়ে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তারপর তাঁরা হিমালয়ের পূর্বাঞ্চল হতে বালাদেশে আসেন। আসামে আসার পর দুই সতীর্থের চিরতরে বিচ্ছেদ ঘটে। বেণীমাধব কামাখ্যা অভিমুখে যাত্রা করেন আর লোকনাথ পূর্ববঙ্গের মহাপিঠ চন্দ্রনাথের উদ্দেশ্যে রওনা হন। লোকনাথ চন্দ্রনাথে বেশ কিছুকাল সাধনা করার পর ভেঙ্গু কর্মকার নামক এক ভক্ত তাঁকে বারদীতে নিয়ে আসেন। সেখানেই স্থানীয় জমিদার ও ভক্তদের সহায়তায় তাঁর আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়। বারদীতে বাবা লোকনাথ নানা অলৌকিক লীলা করতে থাকেন। তাঁর আশ্রমে লোকজন রোগমুক্তি ও বিভিন্ন বিঘ্ন লাঘব করার আশায় আসতে থাকে। বাবাও সদয় হয়ে তাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। বাবার কৃপায় মৃতব্যক্তিও প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। বেশ কিছুকাল পূর্বে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী যখন চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ধ্যানস্থ হয়েছিলেন তখন সেখানে দাবানল শুরু হয়েছিল। হঠাৎ সেখানে লোকনাথ ব্রহ্মচারী উপস্থিত হয়ে তাঁকে নিরাপদ স্থানে রেখে চলে গিয়েছিলেন। সেই বিজয়কৃষ্ণ বাবার সন্ধানে বারদীতে আসলে বাবা তাঁর সাথে স্নেহের আলিঙ্গন করেন। বাবার আশীষে বিজয়কৃষ্ণ আধ্যাত্মিকতার আরও উচ্চ স্তরে উপনীত হয়েছিলেন। 

একবার দুই উশৃঙ্খল যুবক আশ্রমবাসীদের অনিষ্ট করার উদ্দেশ্যে আসলে একটি বাঘ গর্জন করতে করতে আশ্রমের দিকে ছুটে আসে। বাঘের ভয়ে তারা পালিয়ে যায় আর বাঘটি ছুটে এসে লোকনাথ বাবার পায়ে লুটিয়ে পড়ে নিজের ভাষায় কী যেন বলতে থাকে। তখন বাবা বাঘটিকে পরম স্নেহভরে জঙ্গলে ফিরে যেতে বললে বাঘটি চলে যায়। আসলে মুক্ত-পুরুষগণ পশু ও মানুষে সমজ্ঞান করেন এমনকি তাঁরা পশুর ভাষাও বুঝতে পারেন। জীবনের শেষদিকে তিনি এক যক্ষ্মা-রোগীর প্রতি করুণা পরবশ হয়ে তার সমস্ত রোগ নিজ দেহে গ্রহণ করেন। ফলে ঐ রোগীটি সুস্থ হয়ে উঠেন এবং বাবার দেহে যক্ষ্মার লক্ষণ দেখা যায়। যখন তাঁর বয়স ১৬০ বৎসরের কাছাকাছি তখন তাঁর মনে হল ইহলীলা সাঙ্গ করার সময় হয়ে গেছে। তাই তিনি মহাপ্রয়াণের দিনটি ধার্য করে ফেললেন। দেহত্যাগের কিছুদিন পূর্বে তিনি আশ্রমের ভক্তদের বলেন মৃত্যুর পর তাঁর মৃতদেহ অগ্নিতে দগ্ধ করতে। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১৮ই জৈষ্ঠ্য আশ্রমবাসীদের দুপুরের ভোজনের পর ধ্যানযোগে ব্রহ্মরন্ধ্র ভেদ করে প্রাণ-বায়ু নিঃসরণ করেন। তিনি আজও ভক্তদের বিপদের ত্রাণকর্তা। তাঁর স্থুলদেহের মৃত্যু ঘটলেও তিনি সূক্ষ্মদেহে এসে শরণাগতদের উদ্ধার করছেন। কারণ করুণাময় লোকনাথ যে বলেছিলেন, ‘‘রণে বনে জলে জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়িবে, আমাকে স্মরণ করিও আমিই রক্ষা করিব’’। এমন কথা কোন জীতেন্দ্রিয়, জাতিস্মর ও মুক্তপুরুষ ব্যতীত কেই বা বলতে পারে?

৩টি মন্তব্য:

  1. প্ণাম বাবা সর্ব মঙ্গলকারী লোকনাথ ব্রহ্মচারী।

    উত্তরমুছুন
  2. আচার্য বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর শিষ্য শ্রীকুলদানন্দ ব্রহ্মচারী লিখিত "সদগুরু সঙ্গ" গ্ৰন্থটিতে বারদীর মহহাপুরুষ লোকনাথ ব্রহ্মচারী সম্বন্ধে অনেক তথ্য পাওয়া যায় (পৃ.৭৬-৮৩)।
    এই গ্ৰন্থটি অনুযায়ী (পৃ.৭৯, সদগুরু সঙ্গ) লোকনাথ ব্রহ্মচারীর জন্ম "শান্তিপুরে বিশুদ্ধ 'অদ্বৈতবংশে' (এবং) গোস্বামী মহাশয়ের প্রপিতামহের তিনি সহোদর ছিলেন"।
    এই একই সূত্র (পৃ.৮০) থেকে জানা যায় যে, ত্রৈলঙ্গ স্বামীর সংসারাশ্রমের নাম ছিলো হিতলাল মিশ্র।
    অর্থাৎ, এক-ত্রৈলঙ্গ স্বামী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিলেন অথবা, দুই--তিনি তেলেগু ছিলেন (যেমন, ত্রৈলঙ্গ স্বামী সম্বন্ধে লেখাটিতে বলা হয়েছে)। সঠিক তথ্যটি এখন কি আর জানা সম্ভব?

    উত্তরমুছুন

Akash Bairagi. Blogger দ্বারা পরিচালিত.