Header Ads

সাধক ভোলানন্দ গিরি


ভোলানন্দ গিরি
সাধক ভোলানন্দ গিরি ১৮৩২ খ্রীষ্টাব্দে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভোলানন্দ গিরির পিতার নাম ব্রহ্মদাস এবং মাতার নাম নন্দা দেবী। তিনি পসত্মানা আশ্রমে গোলাপগিরির নিকট সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। তিনি গুরুর নির্দেশে পস্তানা আশ্রম ত্যাগ করে হিমালয়ে সাধনা করতে চলে যান। ভোলানন্দ গিরির একবার হিমালয়ে সাধনাকালে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন এক পাহাড়ী লোক ভোলানন্দ গিরিকে সেবা-শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলেন। ঐ পাহাড়ী লোকটিই তাঁর প্রথম শিষ্য হলেন। ভোলানন্দ গিরি হিমালয় থেকে তিববত, ওশেনিয়া, সাইবেরিয়া ও ভারতের বিভিন্ন স্থান পরিব্রাজন করেন। পরে তিনি হরিদ্বারের তালতারাবাগে শাস্ত্র অধ্যয়ন ও সাধনার জন্য একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন যা ভোলাগিরি আশ্রম নামে পরিচিত হয়। ভোলানন্দ গিরি যখন নবীন সন্ন্যাসী ছিলেন তখন তাঁর সাথে এক প্রবীন সন্ন্যাসীর সাক্ষাৎ হয়। তিনি দেখলেন যে, তর্পণ শেষে ঐ প্রবীন সন্ন্যাসী ‘‘গর্দভোহহম (আমিই গাধা), বিড়ালোহহম (আমিই বিড়াল), কুক্কুটোহহম (আমিই মুরগী)’’ প্রভৃতি বলছেন। এসব শুনে ভোলানন্দ গিরি আশ্চর্যান্বিত হয়ে তাঁকে জীজ্ঞাসা করলেন, ‘‘মহারাজ, আপনি শিবোহহম না বলে এসব কী বলছেন? তখন ঐ প্রবীন সন্ন্যাসী উত্তর দিলেন,‘‘বেটা অদ্বৈতভাবে উপাসনা করতে গিয়ে তোমরা দ্বৈতভাবকেই টেনে আন। ‘‘শিবোহহম’’ বলতে গিয়ে নিজেকে জীব থেকে পৃথক মনে কর। এতে ধারণা হয়, তুমি শুধু শিব, জীব নও। প্রকৃত জ্ঞানী সর্বভূতেই নিজের আত্মাকে দেখতে পান। তিনি জানেন, সবই আমি-জীব, শিব, পশু সব কিছু। মনে রাখবে, সর্বভূতে সর্বলোকে এই আত্মা বিরাজিত। সর্বস্থানে ওতপ্রোত আছে তোমার স্বরূপ, তোমার আত্মা। এই জ্ঞানই চরম অদ্বৈত জ্ঞান’’। ব্রহ্মজ্ঞ সন্ন্যাসীর কথায় তিনি পরম তপ্তি পেলেন। একবার প্রয়াগক্ষেত্রে পূর্ণকুম্ভ মেলায় ভোলানন্দ গিরির সাথে প্রভূপাদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর সাক্ষাৎ হয়। ভোলানন্দ গিরি বিজয়কৃষ্ণকে খুব ভালবাসতেন এবং ‘‘মেরে আশুতোষ’’ বলে সম্বোধন করতেন। বিজয়কৃষ্ণ ভোলানন্দ গিরিকে সাক্ষাৎ শিব রূপে জানতেন। ভোলানন্দ গিরি একবার শ্রীহট্টের সুনামগঞ্জ নিবাসী শিষ্য অমরনাথের পুত্রকে দুরারোগ্য ব্যাধি হতে মুক্ত করেন। আরেকবার তিনি এক বাঙ্গালী শিষ্যকে অলৌকিক উপায়ে জঙ্গলে বাঘের কবল হতে রক্ষা করেন। একদিন ভোলানন্দ গিরি শিবের স্বপ্নাদেশ পেয়ে আশ্রমের এক প্রান্তে মাটি খনন করেন। খননের ফলে শিবলিঙ্গ উঠে আসে। তিনি ঐ শিবলিঙ্গ আশ্রমে প্রতিষ্ঠা করেন। ভোলানন্দ গিরি হঠাৎ দৃষ্টিহীন হয়ে গেলে শিষ্য তাঁকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিছুদিন পর তিনি আশ্রমে বসে ধ্যানস্থ হওয়ার পর শুনতে পান-‘‘ভোলা চেয়ে দেখ আমরা কে?’’ চোখ মেলে ভোলানন্দ গিরি দেখেন তাঁর সামনে হর-পার্বতী। তখন শিব তাঁর একটি চক্ষু দান করে চলে গেলেন। এরকম অসংখ্য লীলা সাঙ্গ করে ১৯২৮ খ্রীষ্টাব্দের ৮ই মে কৃষ্ণ-চতুর্দশীতে ভোলানন্দ গিরি ইহলোক ত্যাগ করেন।

1 টি মন্তব্য:

Akash Bairagi. Blogger দ্বারা পরিচালিত.