Header Ads

কালীসাধক রামপ্রসাদ সেন

ঈশ্বরের শক্তিকে মাতৃরূপে সাধনার জন্য সাধক রামপ্রসাদ আজও অমর হয়ে আছেন। ১১২৭ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে ভাগিরথীর পূর্বতীরে অবস্থিত হুগলি শহরে শক্তিসাধক রামপ্রসাদ জন্মগ্রহণ করেন। রামপ্রসাদ ছেলেবেলা থেকেই সংসারের প্রতি অনাসক্ত ছিলেন। ২২ বছর বয়সে তাঁকে বিবাহ দেয়া হলেও সংসারের প্রতি তাঁর উদাসিনতা বিন্দুমাত্র হ্রাস পায়নি। পিতার মৃত্যুর পর তিনি সংসারের হাল ধরেন। সেজন্য তিনি বাধ্য হয়ে গরানহাটার জামদার দুর্গাচরণ মিত্রের দপ্তরে মাসেক ত্রিশ টাকা বেতনে মুহুরীর কাজ শুরু করেন। কিন্তু হিসাব-নিকাশ করবেন কী, হিসাবের খাতায় তিনি শ্যামা-সঙ্গীত রচনা করতে লাগলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনে জমিদার মহাশয় এসে হিসাবের খাতা খুলে দেখেন সেখানে শ্যামাসঙ্গীত লেখা। লেখার ভাব ও গভীরতা দেখে তিনি রামকে বললেন বাড়ি গিয়ে কাব্য রচনা করতে এবং তিনি আরও জানালেন যে, কাজ না করেও তিনি ত্রিশ টাকা বেতন ঠিকই পাবেন। তারপর রামপ্রসাদ গ্রামে ফিরে এসে মাতৃসাধনা ও মাতৃ-সঙ্গীত রচনায় মনোনিবেশ করলেন। একবার এক ঝড়ে তাঁর গৃহখানি ভেঙ্গে গিয়েছিল। অগত্যা তিনি নিজেই গৃহ-সংস্কারের জন্য বেড়া বাঁধতে লাগলেন। তিনি শ্যামা-সঙ্গীত গাইতে গাইতে বেড়া বাঁধতে ছিলেন আর তাঁর ছোট্ট মেয়ে বেড়ার অপর পাশ থেকে দড়ির প্রামত্ম ফিরিয়ে দিচ্ছিল। হঠাৎ মেয়েটি স্বভাবসুলভ চপলতাবশতঃ অন্যত্র খেলতে চলে গেলেন কিন্তু তারপরও তাঁর বেড়া বাঁধায় বিঘ্ন ঘটল না। কারণ তাঁর ঐ মেয়ের মতই একটি মেয়ে তাঁকে বেড়া বাঁধায় সাহায্য করছিল। কিছুণ পর তাঁর মেয়ে এসে দেখল যে, বেড়া বাঁধার কাজ শেষের পথে। তখন মেয়েটি তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করল যে, তার অনুপস্থিতে বেড়া বাঁধার কাজ এতটা অগ্রসর হল কী করে? মেয়ের কথা শুনে রামপ্রসাদের বুঝতে আর বাকী থাকল না যে, এ কার্য স্বয়ং মা কালীরই। এরকম বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনা ঘটতে থাকে তাঁর জীবনে।
রামপ্রসাদ সেন
একবার রামপ্রসাদ ত্রিবেনী-ঘাটে বসে মা কালীকে গান শুনিয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপে মা কালীর সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন। তিনি তন্ত্রোক্ত বীরাচার, দিব্যাচার, কুলাচার প্রভৃতি সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেন। ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে জীবনের শেষ দিনে শক্তিসাধক রামপ্রসাদ গঙ্গার জলে নিমজ্জিত হয়ে আনন্দে মাতৃনাম গাইতে গাইতে দেহ ত্যাগ করেন। তাঁর রচিত শ্যামাসঙ্গীত ভক্তদের হৃদয়ে আজও মাতৃভক্তি জাগ্রত করে। কবিরঞ্জন রামপ্রসাদ সেনের মৃত্যু হলেও তাঁর রচিত শ্যামাসঙ্গীত এখনও উজ্জীবিত রয়েছে যা ভক্তদের হৃদয়ে আজও মাতৃভক্তি জাগ্রত করে।

কোন মন্তব্য নেই

Akash Bairagi. Blogger দ্বারা পরিচালিত.